চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল চুয়েট, দ্বিতীয় দিনে সড়ক অবরোধ

IMG 20240423 232555

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাউজান  : চট্টগ্রাম- কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় দুই সহপাঠীর নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। দুই শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় সোমবার রাতেই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূড়ি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এর ধারা বাহিকতায় ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনের কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শত শত শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সড়কে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভের কারণে কাপ্তাই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব ৭২ ঘন্টার মধ্যে  দাবি  পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন। এদিকে চুয়েট শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও তৌফিকের মৃত্যুর ঘটনায় চলমান আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছে। দাবিগুলো হলোপলাতক ড্রাইভার এবং তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেপ্তার,  শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ভুক্তভোগীদের পরিবারকে যথার্থ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার এবং দাবি মেনে নিতে শাহ আমানত বাস কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা। চুয়েট কর্তৃপক্ষকে বাদী হয়ে মামলা করা। চট্টগ্রাম -কাপ্তাই মহাসড়কের দ্রুত প্রশস্থকরণ কার্যক্রম শুরু এবং এই রুটে দুরপাল্লার বাস ব্যতীত সকল লোকাল বাস (এবি ট্রাভেলস, শাহ আমানত ও অন্যান্য) চলাচল নিষিদ্ধ করা। চুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারে সকল প্রকার প্যাথলজিকাল পরীক্ষা, এক্সরে, ইসিজি ইত্যাদি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিশ্চিতকরণ এবং এই মুহূর্ত থেকে সকল অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেনপূর্ন সিলিন্ডার, শ্বাস প্রদান যন্ত্রের ব্যবস্থাসহ সকল প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিক্যাল সেন্টারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়ের চিকিৎসক সেবা নিশ্চিত করা। অ্যাম্বুলেন্স সংখ্যা শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে অপ্রতুল হওয়ায় অতি দ্রুত শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৪টি অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা। চুয়েটের বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, বিআরটিসি কর্তৃক শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বাসের শিডিউল পুনঃনির্ধারণ। প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক বক্স ও সড়ক পুলিশের অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং সংখ্যা বৃদ্ধি। লাইসেন্স চেকসহ মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরো সড়ক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এছাড়া রোড ডিভাইডার, স্পিড ব্রেকার, সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে গাড়ির স্পিডলক ও স্পিড মনিটরিং এর মাধ্যমে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্দোলন কালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক সকল কার্যক্রম রিশিডিউল করা। এখন থেকে সকল শিক্ষার্থীর যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং এই ব্যাপারে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের নিকট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। দাবিগুলো না মানার আগ পর্যন্ত পরীক্ষাসহ সকল ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের পাশাপাশি মঙ্গলবার  দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নিহত শিক্ষার্থীদের গায়েবানা জানাজা এবং বিকেল  তিনটায় সাংবাদিকদের প্রেস কনফারেন্স  করেন শিক্ষার্থীরা। এতে চুয়েটের ভিসি,রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চুয়েটের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। এসময় ছাত্ররা তাদের দেয়া নয়দফা দাবী উপস্থাপন করেন। চুয়েটের ভিসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের দাবী মনে নেয়ার আস্ত করেন।উল্লেখ্য সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসেন নামে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই ছাত্র নিহত হন। ঘটনার পর থেকেই চুয়েট ক্যাম্পাস এলাকার সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শাহ আমানত লাইনের ৪টি বাস আটকে রাখে তারা। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চালায়। রাত ৯টার দিকে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ