এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান ও ওয়েলম্যান শাকিল ও আইনুল হক’র পরিবারে বিষাদের কান্না

IMG 20240316 002238

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই: সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিল ও ওয়েলম্যান আইনুল হক অভির বাড়িতে চলছে শোক আর বিষাদের কান্না। শাকিল আর আইনুলের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন তাদের পরিবার। চার মাস পরেই দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিলো তাদের দু’জনের। পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি পাত্রীও দেখা হয়েছিলো। শাকিল মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের শামছুল হক ও আনোয়ারা বেগমের ৬ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। আইনুল হক অভি ইছাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ ভ‚ঁইয়া গ্রামের সুজাউল হক ভোলা মিয়ার ছেলে। অভি স্বপরিবারে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় থাকেন। জলদস্যুদের হাতে আটকের পর তাদের ঘিরে পরিবারের সদস্যদের আশা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শাকিল চার মাস আগে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে যোগ দেন। এ চাকরি তার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছিল। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এই সদস্যের জিম্মিদশায় আতঙ্কিত পুরো পরিবার। সন্তানের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন শাকিলের মা আনোয়ারা বেগম। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে শাকিলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আঁর হুতে আঁতুন কথা লুআইছে করযে আঁর ফোনে এমবি নাই; আঁই ১৫-২০ দিন কথা কইতাম হাইরতান্ন তোঁয়ার ওষুধ আব্বার আতায় আনাইয়ো’ (আমার ছেলে আমার থেকে কথা লুকিয়েছে। মোবাইলে কল দিয়ে বলে তার এমবি নাই, ১৫-২০ দিন আমাদের সাথে কথা বলতে পারবেনা। আমার ওষুধ যেন তার বাবাকে দিয়ে আনিয়ে নিই)। এটাই ছিল আমার সাথে শাকিলের শেষ কথা। তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা আমার আদরের ছোট ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও, জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি অনুরোধ আমার সন্তানসহ যারা একসাথে জিম্মি সবাইকে যেন তাদের মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।’ মোশারফ হোসেন শাকিলের বড় ভাই আবু বক্কর জানান, এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ৪ বছর আগে শাকিল চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমীতে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে জাহাজে যোগ দেয়। সর্বশেষ ৪ মাস আগে দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে জাহাজে ফিরেছে। এবার ছুটিতে দেশে আসলে বিয়ে করানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। আমাদের সকলের আদরের একমাত্র শৌখিন ছোট ভাই এমন বিপদের মুখোমুখি হবে তা ভাবতেই পারছি না। সর্বশেষ ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাকে জানায়, সোমালিয়ান জলসদস্যুরা তাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সবাইকে একটি কক্ষে আটকে রেখেছে। এ কথা বলে কল কেটে দেয়। পরবর্তীতে রাতে ল্যাপটপের সাহায্যে আমাদের বার্তা পাঠায় সবার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে। হয়তো ল্যাপটপ নিয়ে নিবে। আমার জন্য দোয়া করিয়েন। তিনি আরো বলেন, ‘জাহাজটির মালিক কবির গ্রুপ থেকে বলা হয়েছে আপনারা ধৈর্য ধরেন। আমরা বিষয়টি দেখছি। জাহাজের নাবিকদের জীবিত উদ্ধার করতে সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখছে।’ আইনুল হক অভির মা লুৎফা আরা বেগম বলেন, ‘বুধবার সকাল ৭টায় অভির সাথে শেষ কথা হয়েছে। সে বলে দস্যুরা আমাদের না মারলেও শুধু ভয় দেখাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ভয় দেখাচ্ছে। অফিসে গিয়ে মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে আমাদের জন্য কিছু করতে বলো। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলো আমাদের সাহায্য করতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ও দেশে আসার সময় গয়না কিনে আনা কথা ছিলো। অভি ডুবাই গিয়ে গয়না কেনার কথা। আমরা তার জন্য মেয়ে দেখছি। ও আমার সাথে সব কথা শেয়ার করতো। আমার ছেলে যেন আমার বুকে ফিরিয়ে আসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই চাওয়া।’ করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমার ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন শাকিল নামে একজন সোমালিয়ায় জলদস্যুদের হাতে জাহাজে আটক রয়েছে। তাকে ফিরে পেতে পরিবারের লোকজন আকুতি করছে। আমরা যতটুকু দেখছি সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি আটক হওয়া সবাই দেশে ফিরে আসবে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া জলদস্যুদের কবলে পড়ে। গত রোববার মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল জাহাজটি। মঙ্গলবার জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায় জলদস্যুরা।

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ