আজ মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

IMG 20240221 095842

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

নিউজ ডেস্ক,চটলা প্রতিদিন : আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির জীবনে এক কালজয়ী দিন। আজ বাঙালির হৃদয় যেমন স্বজন হারানোর বেদনায় হাহাকার করে, তেমনি অধিকার আদায়ের আনন্দেও উদ্বেলিত হয়। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই কোটি কণ্ঠ গেয়ে উঠবে সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ ধর্ম-বর্ণ, পেশা-বয়স নির্বিশেষে সব মানুষ ভাষাবীরদের প্রতি ফুলের ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় প্রভাত ফেরি করবে, শহীদ মিনারে জমায়েত হবে। অঙ্গীকার করবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার। আজ একুশ শুধু বাঙালির নয়, গোটা বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে দুটি দেশ। ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই একসাথে পথ চলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দূরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালী। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয় এ আঘাত বাঙালী সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীরা ফুঁসে উঠতে থাকে। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে গোঁয়ার পাকিস্তানীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার ভাষা আন্দোলনকে বানচাল করতে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাইকযোগে প্রচার করে ‘আগামী এক মাস ১৪৪ ধারা চলাকালে কোন মিটিং-মিছিল করা চলবে না। এমনকি পাঁচ জন একত্রে হাঁটাচলাও করতে পারবে না।’ ওইদিন রাতেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রসভা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করা সেøাগানে অগ্রসরমান একটি মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হোস্টেলের সামনে পৌঁছলে পুলিশের অতর্কিত গুলিবর্ষেণ। রফিক, জববার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকের বুকের রক্তে ভেসে যায় পিচঢালা রাজপথ। শহীদদের রক্তের লালিমা যেন আরও প্রগাঢ় করে পলাশ-শিমুল ও কৃষ্ণচূঁড়াকে। এই খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে বাঙালির মতো বিক্ষোভ-প্রতিবাদে তেতে ওঠে সেদিনকার শীতার্ত প্রকৃতিও। সেই থেকেই আমরা পেয়েছি ‘অ আ ক খ’ সহ আমাদের বর্ণমালা। এ ঐতিহাসিক আন্দোলনের বীজমন্ত্র থেকেই বাংলা দেশিরা স্বাধিকার আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজ পতাকা আর স্বাধীনতা। অমর একুশে উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। এ দিনটি পালনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জনপদেও চলছে নানা আয়োজন। শহীদ মিনারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে। আজ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ