রাউজানে কলেজ ছাত্র খুনের জের হত্যাকারীকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে গণপিঠুনি দিয়ে হত্যা করল উত্তেজিত জনতা

raozan pic

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

এম কামাল উদ্দিন:  রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ী এলাকা শিলছড়ি নামক স্থান থেকে অপহরণের ১৩ দিন পর শিবলী সাদেক হৃদয় (২০) নামের অপহৃত কিশোরের লাশের খণ্ড খণ্ড অংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণ মামলার মূল আসামী উমংচিং মারমার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ৮ টার দিকে লাশের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করে রাউজান থানা পুলিশ। পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথে উপজেলার কদলপুর আশরাফ শাহ মাজার সড়কে ব্যরিকেড দেয় উত্তেজিত কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। তারা পুলিশের গাড়ী অবরোধ করে গাড়ীতে থাকা মামলার মূল আসামী উমংচিং মারমা (২৬) কে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিঠুনিতে হত্যা করে। এ সময় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। উত্তেজিত জনতাকে পুলিশ লাটিপেটা করতে শুরু করে। জনতাও পুলিশের উপর লাটিসোটা দিয়ে আক্রমন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্তি পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে ছুটে যান। আসামী ছিনতাইয়ের সময় উত্তেজিত কয়েক হাজার জনতার সাথে পুলিশের এই সংঘর্ষে আহত হয়েছে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন , ওসি তদন্ত সিদ্দিকুর রহমান, (৪৫) সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীল (৩৫), এসআই কানু লাল অধিকারী (৪১), এস আই শাহাদাত হোসেন(৩১), এস আই কিশোর কুমার দে (৩৩), এস আই জসিম (৫৫), এস আই আজিজুল হাকিম (২৯) এ এস আই শাহিদুল (৩৬) সহ অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ী ভাঙচুর করে। সকাল ৯টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পষর্ন্ত স্থানীয় জনতার সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংর্ঘষ চলে। দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো: আরিফ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) আসাদুজ্জামান, রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির। গত ২৮ আগস্ট উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের একটি মুরগীর খামার থেকে নিখোঁজ হন কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডের শফিক ড্রাইভারের ছেলে কলেজছাত্র শিবলি। শিবলি ওই পোল্ট্রি খামারে ম্যানেজারের কাজ করতেন। একই খামারে তার সাথে কয়েকজন আদিবাসীও কাজ করতেন। তাদের মধ্যে বিরোধের কারণে অপহরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিবলির পরিবার জানিয়েছে, গত দু মাস আগে সেখানে কাজ করা আদিবাসী যুবকদের সাথে শিবলির বিরোধ হয়। পরে মালিকের উদ্যোগে তাদের মিলিয়ে দেওয়া হয়। তার ঠিক দুই মাস পর অপহরণ হন শিবলি। এরপর অপহরণকারীদের দাবি অনুসারে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছিলেন সাদিকের বাবা। পরে মামলার সূত্র ধরে র‌্যাবের হাতে মূল আসামী আটকের পর তার স্বীকারোক্তিতে লাশের খন্ডিত অংশ একই ইউনিয়েনের দুর্গম পাহাড়ী জনপদ থেকে উদ্ধার হয়। ছেলের মৃত্যুর সংবাদে বুকফাঁটা আহাজারিতে ফেটে পড়েন মা নাহিদা আকতার। এ সময় তার স্বজনরা শিবলি হত্যায় জড়িত অন্যান্যদের আসামীদের ফাঁসির দাবি জানান। উল্লেখ্য, নিখোঁজের ১১দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর সাদিকের মা বাদি হয়ে রাউজান থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাতসহ ৬জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন উমংচিং মারমা (২৬), সুইচিংমং মারমা (২৫), অংথুইমং মারমা (২৫), উক্যাথোয়াই মারমা। এফআইআরে উল্লেখ করা ৬জনের মধ্যে আরও ২ জনকে পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ২জন হলেন বেতবুনিয়া ইউপির ৬নম্বর ওয়ার্ডের উহ্লা প্রমং মারমার ছেলে ও আছুমং মারমা (২৬), কাপ্তাই থানার চিৎমরং ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার উষাচিং মারমার ছেলে ঊক্যথোয়াই মারমা (১৯)। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, প্রায় ৩ ঘন্টা পায়ে হেঁটে দুর্গম কদলপুর-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে অপহৃত হৃদয়ের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই অপহরণের ঘটনায় কয়েকদিন আগে দুইজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। রোববার উমংচিং মারমা নামে আরও একজনকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে সোমবার ভোরে অভিযানে যায় পুলিশ। খণ্ডিত মরদেহ নিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় কয়েক হাজার লোক পুলিশের উপর হামলা করে আসামীকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিঠুনি দিলে সেই মারা যায়। রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার অজয় দেব শীল বলেন, অভিযুক্ত উমংচিং মারমাকে গণপিঠুনি দিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। কাউকে এখনো আটক করা হয়নি।

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ