
নিজস্ব প্রতিবেদক , রাউজান: এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর অবশেষে পুরোদমে ডিম ছেড়েছে কার্পজাতীয় মা মাছ। ২৯ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে নদীর হাটহাজারী অংশের আমতুয়া এলাকায় মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাতের নীরবতা ছাপিয়ে নদীতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে ডিম ধরার জন্য নদীপাড়ে অপেক্ষায় থাকা কয়েক শতাধিক ডিম সংগ্রহকারীদের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ২৯ মে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার মৌসুমে দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ। নমুনা ডিমের পরিমাণ বেশি হওয়ার এবং ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ বিরাজ থাকায় ডিম সংগ্রহকারীরা আশায় বুক বাঁধেন। তারা জাল, নোঙরসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে আজিমের ঘাট, আমতুয়া, গড়দুয়ারাসহ বিভিন্ন স্পটে অপেক্ষা করতে থাকেন। রাত আনুমানিক ৮ টার পর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দমকা হাওয়ায় নদীতে অবস্থানরত ডিম সংগ্রহ কারীরা দুর্ভোগে পড়েন। রাত ১২ টার সময় প্রবল বর্ষণে নদীর আমতুয়া ঘাটে ডিম সংগ্রহকারীদের জালে বেশি পরিমাণ ডিম উঠতে থাকায় পুরোদমে ডিম ছাড়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হালদা নদীতে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে কয়েক শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী ডিম ধরার উৎসবে সামিল হন। এ সময় নদীর আজিমের ঘাট, নতুনহাট, আমতুয়া,মাছুয়াঘোনা, রামদাস মুন্সীর হাট, নাপিতেরঘাট, সোনাইরমুখ, গরদুয়ারা, অংকুরি ঘোনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছে। শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত চলে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ। হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী রোসাঙ্গীর আলম ও মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, এবার পুরোদমে ডিম ছাড়লেও বৈরি আবহাওয়ার কারনে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি।তারা তিনটি নৌকায় তিন বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে জানান, ডিম সংগ্রহকারী সাধন জলদাশ বলেন, কতটুকু পেয়েছি বড় কথা নয়, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির। গহিরার অংকুরিঘোনা এলাকার প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়া বলেন,বৈরি আবহাওয়ার কারণে কষ্ট হলেও দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে এতে আমরা খুশি। তিনি বলেন, দুটি নৌকায় ৭/৮ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলো তারা অধিক ডিম সংগ্রহ করেছিলো। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে (২-২.৫) বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ডিম সংগ্রহকারীরা ভীষণ আনন্দিত। বর্তমানে ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারী ও মাটির কূয়ায় ডিম ফুটানো কাজে ব্যস্ত। উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার অমাবস্যার জোঁ বা তিথীতে (৪র্থ জোঁ) সকাল ১১ টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে দ্বিতীয় দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে কার্পজাতীয় মা মাছ। প্রথম দিকে খুবই সামান্য পরিনাণে নমুনা ডিম পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে জোয়ার বাড়ার সাথে সাথে ডিমের পরিমাণ কিছুটা বাড়তে থাকে। যেহেতু অমাবস্যার জোঁ চলছে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলেই রাতেই পূরোদমে ডিম ছাড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিলো। ঠিক হয়েছে ও তাই। এতে ডিমসংগ্রহকারী সহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, অনুকূল পরিবেশ থাকায় বৃহস্পতিবার রাতে হালদা নদীতে পুরোদমে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সংগ্রহকারীরা উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছে। এখন আমরা হ্যাচারি পরিদর্শন করে এবং ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার কেজি নির্ণয় করা হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, হালদা নদীতে মা মাছ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। নদীতে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেছে ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতের জোয়ারে ডিম ছাড়ায় মোবারেখখীল, আইডিএফ, কাগতিয়া, গড়দুয়ারা, আজিমেরঘাট, আমতুয়া, রামদাশহাট সবখানেই ভালো পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম সংগ্রহের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন সংগৃহীত ডিম যাতে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পরিস্ফুটন করে রেণু ফুটানো যায় সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমরা হ্যাচারিগুলোতে নিয়েছি। উল্লেখ্য প্রতিবছর এপ্রিল-মে দুই মাসের যে কোনো সময় ডিম ছাড়ার ভর মৌসুমে নিষিক্ত ডিম আহরণ করতে ব্যস্ততার সীমা থাকেনা হালদাপারের ডিম সংগ্রহকারীদের।