প্রতিমায় রং তুলির শেষ আঁচড়ে ব্যস্ত রাউজানের মৃৎশিল্পীরা

IMG 20241007 002224

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাউজান : আসন্ন দুর্গাপূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লহ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। কিছু কিছু মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে শুরু হয়েছে রঙের কাজ। গত ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রধান আকর্ষণ প্রতীমা তৈরির কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রাউজানের প্রতীমা শিল্পীরা। নির্ধারিত সময়ে পূজার্থীদের প্রতিমা বুঝিয়ে দিতে কারখানার কারিগররা এখন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছে না। উপজেলার কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, কাদামাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় গড়ে তোলা হয়েছে দেবী দুর্গার প্রতিমা। দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। সুনিপুণ হাতে মাটি ও রঙতুলির ছোঁয়ায় দেবীকে রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারিগররা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে দেবী দুর্গা,লক্ষ্মী, সরস্বতী,কার্তিক,অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি।

সরেজমিন দেখা যায়,শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য প্রতিমা তৈরীর কাজ করা হচ্ছে রাউজান উপজেলার কুন্ডেশ্বরী, সত্যের দোকান, রাউজান ফকির হাট কালী বাড়ী, সুলতানপুর আচার্য পাড়ায়, সুলতানপুর বড়ঠাকুর  আশ্রম,বাইন্যা পুকুর পাড়,পাহাড়তলী ঊনসত্তর পাড়া,নোয়াপাড়া,বাগোয়ান,পূর্ব গুজরাসহ বিভিন্ন এলাকায়। রাউজান ফকির হাট কালী বাড়ীর প্রতিমা তৈরীর মৃৎশিল্পী নান্টু পাল বলেন,শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের মত এবারও ২০টি প্রতিমা তৈরির কাজের অর্ডার নিয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরির অর্ডার নিয়েছি ৩০-৫০ হাজার টাকা করে। সময়মত প্রতিমা ডেলিভারি দিতে ৬ জন কর্মচারী রেখেছি। ইতোমধ্যে বাঁশ,কাঠ আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। এখন তৈরি করা প্রতিমা রোদে শুকিয়ে হাতের তুলিতে প্রতিমার গায়ে নানা রং অলপনা তুলছে। রং-তুলির আঁচড়ে দুর্গাকে দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তুলছেন প্রতিমা তৈরির মৃৎশিল্পীরা। রাউজান পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আচার্য্যপাড়া এলাকার প্রতিমা তৈরীর মৃৎ শিল্পী প্রশান্ত আচার্য্য বলেন, প্রতি বছর দুর্গা প্রতিমা তৈরী করেন ২০ থেকে ২২টি। এ বছর অর্ডার নিয়েছেন ২০টি প্রতিমার। তৎমধ্যে নিজের কারখানায় তৈরী করছেন ১৯টি প্রতিমা। বাকি প্রতিমা গুলো স্ব স্ব পূজা মন্ডপে তাদের দেয়া ডিজাইন নক্সা অনুযায়ী তৈরী করবো। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের এলাকার ঢেউয়াপাড়া অপরাজিতা সেবাশ্রমে অবস্থিত প্রতিমা তৈরীর কারখানায় এ বছর প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন রূপন চক্রবর্তী নামে প্রবীণ এক মৃৎ শিল্পী। তিনি জানান, ১২জন কর্মচারী নিয়ে এ বছর ১১টি প্রতিমা তৈরী করছেন। নোয়াপাড়া পথের হাটের পল্লী মঙ্গল সমিতির সাথে অবস্থিত মৃৎশিল্পী অনিল পাল জানান, এবার আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য বিভিন্ন সাইজ ও ডিজাইনের ৪০টি প্রতীমা তৈরির অর্ডার নিয়েছি। ডিজাইন ভেদে এসব অর্ডার নেয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। একাজ করে কারিগরদের বেতন দিয়ে তেমন কিছু থাকবে না। এই কাজের জন্য ১০ জন কর্মচারি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। সারা বছর নানা দেব দেবির প্রতিমা তৈরি করে থাকি বিক্রির জন্য। এবার রাউজানে ২৩২টি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার নিয়াজ মোরশেদ বলেন, দুর্গাপুজার সময়ে সরকার থেকে পুজামন্ডপের জন্য চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এবার এপর্যন্ত রাউজান পৌর এলাকা ও ১৪টি ইউনিয়নে ২শত ২৮টি পূজা মন্ডপের তালিকা পাওয়া গেছে। তালিকার পরিমান আরো বাড়তে পারে। পূজা মন্ডপের তালিকা চুড়ান্ড করে উর্ধত্বন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর পূজা মন্ডপের জন্য বরাদ্দ দেবে সরকার।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবে এবার প্রতিটি পূজামণ্ডপে প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। ইতিমধ্যে পূজা উদযাপন কমিটির সাথে মতবিনিময় সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী এবারের দুর্গাপূজা ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর সপ্তমী, ১১ অক্টোবর অষ্টমী, ১২ অক্টোবর নবমী, ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ