মামলার ভয়ে কানাডায় পালিয়ে গেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্টকৃত জয়নুলের কিছু ভিডিও থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার তাঁর কানাডায় চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জয়নুল সাতকানিয়া উপজেলার ১৬নং সাতকানিয়া সদর ইউপির করইয়া নগর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মৌলভী পাড়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, জয়নুল অন্তত পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশ থেকে কানাডা চলে গেছেন।
এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় জয়নুলকে খুজছে পুলিশ। সাতকানিয়া থানার তথ্যমতে তার বিরূদ্ধে এ পর্যন্ত মামলা রয়েছে ৩টি। যার একটি নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত গত ৩০ মার্চ ২০২১ ইং তারিখের ৩২৩/২০২১ এছাড়াও অপর মামলা দুটি হল চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের হওয়া গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখের ২২৮/২০২২ ও ২৭ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখের ৫২২/২০২২ ইং। পুলিশের তথ্যমতে ১টি মামলায় জয়নুলের বিরূদ্ধে অলরেডি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা মামলাটি হল ৩০ মার্চ ২০২১ ইং তারিখের ৩২৩/২০২১ ধারায় দায়েরকৃত মামলাটি।
জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, জয়নুলের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। তবে আরো আছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। আমরা তাঁকে খুজছি। পাওয়া মাত্রই আমরা তাঁকে গ্রেফতার করব। জয়নুলের কানাডা চলে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমাদের একটি টিম আছে যারা অপরাধীদেরকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে প্রয়োজনে আমরা তাদের সহযোগীতা নিব।
এদিকে জয়নুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালে দায়ের হওয়া মামলাটি একটি রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে। যেখানে ৫৮ জনকে এজহারনামীয় আসামি ও ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। তার মধ্যে জয়নুলকে ৩৬ নং এজহারনামীয় আসামি করা হয়। এ মামলায় জয়নুলের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য আসামিদের মত ভাঙচুর ও মারামারির অভিযোগ আনা হয়। যদিও জয়নুলের পরিবারের দাবি, তাকে কেবল রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অপরদিকে ২০২২ ইং সালে আদালতে দায়ের হওয়া ২টি মামলায় জয়নুল ছাড়া তার স্ত্রীকেও এই মামলায় আসামী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আনা হয় অবৈধভাবে জমি দখল ও মারামারির। যদিও বাদী ও বিবাদীর স্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায় মামলার দুইজন বাদী ও জয়নুলের বাড়ির দূরত্ব অন্তত ১৫-২০ কিলোমিটার। এছাড়াও দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ইউনিয়ন এবং তাদের সাথে জয়নুলদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে মামলা দুটির বাদী বেলাল হোসাইন ও জানে আলমের সাথে যোগাযোগ করলে জয়নুলের মামলার কথা শুনে তারা মুঠোফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার জন্য বিভিন্ন সময় এ ধরণের মামলা দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, মূলত জয়নুল যখন এবি পার্টির রাজনীতিকে এলাকায় প্রকাশ্যে আনেন এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালান তখন সরকার দলীয় এমপি প্রফেসর ড আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এমপি তাকে টার্গেটে নিয়ে নেন। তাকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করেন। জয়নুলের মামলাগুলো হচ্ছে মূলত রাজনৈতিকভাবে হয়রানির অংশবিশেষ।
এ বিষয়ে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সদস্য সচিব ছিদ্দিক আহমদ জানান, বর্তমান সরকারের প্রধান হাতিয়ার হলো গায়েবি মামলা। নামে বেনামে বা পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হয়রানি করায় এ সরকারের প্রধান কাজ। জয়নুলের ক্ষেত্রেও সরকার একই কাজটাই করেছে। যার কারণে জয়নুলকে আজ বিদেশে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
জয়নুলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, জয়নুলের বিরুদ্ধে হওয়া ৩টি মামলার দুটিতে আমাকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ আমি একজন মহিলা মানুষ। আমার স্বামী রাজনীতি করার দায়ে আমিও আজ ভুক্তভোগী। এই দুটো মামলার কারনে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমাকে আদালতে যেতে হয়। এটি আমার জন্য অত্যান্ত খারাপ বিষয়। আমি যেমন সামাজিকভাবে হেনস্তা হচ্ছি তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
প্রসঙ্গত: জয়নুল আবেদীন রিয়াজ গত পাঁচ মাস আগে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে জানা যায় সে কানাডাতে অবস্থান করছে। জয়নুলের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ হলেও বিদেশে থাকার কারনে জয়নুলের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চট্টলা প্রতিদিন, মোবাইল : ০১৮১৭ - ৭৬৬৭৭১ - ইমেইল : [email protected]
© All rights reserved © 2023 Chattala Protidin