সালাহউদ্দিন জিকু,ফটিকছড়ি: কেঁচো দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, গবাদিপশুর গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্ট, খোসা ও কচুরিপানার মিশ্রণে প্রাকৃতিক উপায়ে কেঁচো ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয় কেঁচো সার। যা ভার্মি কম্পোস্ট সার নামে পরিচিত। এছাড়া কেঁচোকে বলা হয় প্রাকৃতিক লাঙ্গল। তবে এটা শুধু লাঙ্গল নয়, মাটির জৈব উপাদান বৃদ্ধির কারখানাও বটে। ফলে, কেঁচো আর পচনশীল যেকোন দ্রব্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার।
কেঁচোর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সর্বপ্রথম জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন। তিনি বলেন, “কেঁচো ভূমির অন্ত্র এবং পৃথিবীর বুকে উর্বর মাটি তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে, যার ওপর ফসল উৎপাদন করি।“
ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ির রাঙ্গাপানি এলাকার ২৫ কৃষাণী তৈরি করছেন এই কেঁচো সার। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তায় এ সার তৈরি করে অর্থনৈতিক যোগান দিচ্ছেন সংসারে। কম দাম, অধিক কার্যকারিতা, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এ সার ব্যবহারে আগ্রহীও হচ্ছেন কৃষকরা।
সার উৎপাদনকারী উষা বালা নাথ ও সালমা বেগম জানান, উপজেলা কৃষি কার্যালয় থেকে ৫টি চারী (ভার্মি কম্পোস্ট হাউস) কেঁচোসহ ভার্মি কম্পোস্ট প্ল্যান্ট তৈরি করে দিয়েছে। কিভাবে সার তৈরি করতে হবে তারা শিখিয়েছেন। সাধারণত একটি চারী দিয়ে ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। সার তৈরিতে প্রয়োজন হয় কেঁচো আর পচা গোবর। এতে প্রতি মাসে সার বিক্রি করে ১০/১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কেঁচো সার( ভার্মিকম্পোস্ট) একটি ফসল বা গাছের সুষম খাদ্যের যোগান দেয়। যেখানে রাসায়নিক সারে কেবল এক বা দুইটি খাদ্য উপাদান থাকে সেখানে কেঁচো সারে রয়েছে সুষম খাদ্য উপাদান। কেঁচো সার উৎপাদনে এপিজিক ও এন্ডিজিক নামক কেঁচো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ফলে মাটিতে অণুজীবের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাতাস চলাচল বৃদ্ধি পায়। সাধারণত রিং পদ্ধতিতে কেঁচো সার উৎপাদিত হয়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গা জুড়ে রিং, চারি এবং সিমেন্টের তৈরি লম্বা হাউজ নিয়ে তৈরি করেছেন ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্র। প্রথমে গোবর সংরক্ষণের জন্য টিনের চালায় রাখা হয়েছে। তারপর সেই গোবর হালকা শুকিয়ে রিং বা হাউজে দিয়ে কয়েকদিন রাখার পরই তাতে কেঁচো দিয়েই ৩৫-৪০ দিনেই উৎপাদন হয় ভার্মি কম্পোস্ট বা জৈব সার। সেটা বাজারজাত করতে প্রস্তুত করা হয় বাছায় ও প্যাকেটজাত।
কেঁচো সার পাইকারি বিক্রেতা আশিষ কুমার নাথ বলেন, শুরুর দিকে এই সারের চাহিদা বেশি থাকলেও এখন কমে গেছে। স্থানীয় বাগানীরা চারা রোপনের সময় সার প্রয়োগ করলেও এখন তারা নিচ্ছেনা। ধান উৎপাদনকারী কৃষকরা এই সারের উপকারীতা সম্পর্কে জানেনা। তাদের যদি উদ্ভুদ্ধ করা যায় তাহলে কেঁচো সারের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে বলে আশা করছি। এর জন্য কৃষি অফিসের সহায়তা কামনা করছি।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রুবেল ধর জানান, রাঙ্গাপানি এলাকার ২৫ জন কৃষক-কৃষানী কেঁচো সার তৈরি করছেন। কৃষি অফিসও তাদের দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। কেঁচো সারটি ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক ভালো। তারা কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে সফল হয়েছেন। এ সার ব্যবহারের খরচও অনেক কম।
গবেষকরা বলছেন, একটি আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সারে ১.৫৭% নাইট্রোজেন, ২.৬০% পটাশ, ০.৬৬% ম্যাগনেশিয়াম, ১.২৬% ফসফরাস, ০.৭৪% সালফার, ০.০৬% বোরণ রয়েছে। অর্থাৎ একটি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধির জন্য যে কয়টি উপাদান অত্যাবশ্যক তার সব গুলোই এতে বিদ্যমান। এটা জমিতে ব্যবহারে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসানুজ্জামান বলেন, "উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা" য় সারের চাহিদা মিটাতে সংঘটিত নারিরা ভার্মি ফিলেজ স্থাপন করেছেন। কেঁচোসার ও কেঁচো বিক্রি করে অনেকেই সাবলম্বি হয়েছেন। উচ্চ মূল্যের ও নিরাপদ ফসল উৎপাদনে জৈবসার ব্যবহারে খরচ অনেক কম, তাই চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা কেঁচো সার উৎপাদনকারীদের সহযো
চট্টলা প্রতিদিন, মোবাইল : ০১৮১৭ - ৭৬৬৭৭১ - ইমেইল : [email protected]
© All rights reserved © 2023 Chattala Protidin