মহিউদ্দিন ইমন : বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, একটি অপরটির পরিপূরক, পরস্পর একাত্ম, এক সুতোয় বাঁধা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সাধক যিনি তাঁর দীর্ঘ কন্টকাকীর্ণ সাধনায় সমগ্র বাঙালি জাতির মনে সঞ্চার করেছিলেন স্বাধীনতার বাসনা। একটি বদ্বীপের জাতীয়তাবাদের চেতনা তুলে ধরা, একটি ঘুমন্ত জাতিকে তাদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার করা, তাদের সকল শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে শেখানো স্বাধীনতার একজন অনন্য স্থপতি তিনি। বাঙালি জানে, সারা বিশ্ব জানে, বাংলাদেশ সৃষ্টির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আলাদা কোন স্বত্তা নন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, এই কথা অনস্বীকার্য।তাঁর যাত্রা শুরু ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে নয়। ক্রান্তিলগ্নে এই ভূখণ্ডের কোটি জনগণের চূড়ান্ত সংগ্রামের পথপ্রদর্শক হয়েই বঙ্গবন্ধু উপাধি তিনি অর্জন করেছেন । এই পরিচয় কর্মে, ত্যাগে, সংগ্রামে, সাধনায়, নেতৃত্বে তাঁর জন্মসূত্রে পাওয়া নামকেও ছাপিয়ে যায়। ‘বঙ্গবন্ধু’ নামের প্রচারে কিংবা ক্ষমতাকেন্দ্রের দাপট কিন্তু তাঁর মহিমা বাড়ায় না। বরং তাঁর কর্ম ও আদর্শ অনুসরণেই তাঁর অনন্য বিকাশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। রাজনীতির কবির মতো সৃষ্টিশীল চেতনা দিয়ে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন আজীবন। শেখ মুজিব যখনই দেখেছেন বাংলার এই ভূখন্ড শাসক ও শোষকগণের কাছে শুধুই শোষণ, বঞ্চনা ও নিষ্পেষণের এবং যখনই দেখেছেন বাংলার ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি দলিত হচ্ছে শোষক চক্রের কাছে, তখনই তিনি প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, আওয়াজ তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর মূল্যবোধের জায়গা থেকে। তাঁর সিদ্ধান্ত, অবিচলতা নিয়ে বলতে গিয়ে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন-‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি।ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মতো’। ৭ই মার্চের অগ্নিগর্ভ ভাষণে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন জনতার কণ্ঠস্বরে। পৃথিবীতে কোন ব্যক্তির একক স্বাধীনতার ঘোষণা এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি যা পেরেছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। এই ঘোষণা কোটি মানুষকে মরণপণ সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়ে ছিলো যা অজেয় শক্তি হয়ে আমাদের জন্য ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে স্বাধীনতাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ররহমানের ভাষণ ছিল স্বাধীনতার ডাক, মুক্তির আহ্বান একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুর টানা ২৩ বছরের লালিত স্বপ্ন ও অসাধারণ নেতৃত্বে পরিচালিত জনযুদ্ধের রক্তিম ফসল এই বাংলাদেশ। শোষণ, নিপীড়ন, বঞ্চনা আর শত বছরের পরাধীনতার শিকল দুমড়ে-মুচড়ে যে লৌহমানব দেখিয়েছিলেন মুক্তির পথ, দিয়েছিলেন পথহারা জাতিকে পথের দিশা, অমিত তেজে ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতার মূলমন্ত্র, ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ে মুক্তিরবার্তা, তিনি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতি ও সমগ্র বিশ্বের কাছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ। কালজয়ী এ মহাপুরুষের প্রতিটি পদক্ষেপ পথের সন্ধান দিয়েছে আমাদের, প্রতিটি নির্দেশনা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বাঙালি জাতিকে, দিয়েছে নতুন পথের দিশা। বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার নাম চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাইতো কবি অন্নদাশংকর রায় বলেছেন-`যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরি মেঘনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান`
লেখক : সংগঠক,প্রাবন্ধিক।