নিজস্ব প্রতিবেদক, ফটিকছড়ি: ফটিকছড়ি উপজেলায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রি ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোনো প্রকার প্রচার প্রচারণা ছাড়াই ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে বসে বিতরণের ফলে অনেকেই পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আবার অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া যোগসাজস ও কৌশলে অনেক কার্ডধারী গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি না করে পরবর্তী সময়ে স্বজনপ্রীতি ও নিজেদের লোকের এনআইডি কার্ডের ফটোকপিতে স্বাক্ষর করে সেই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়াও কিছু পন্য উচ্চমূল্যে দোকানিদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। টিসিবি পণ্য বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের উপস্থিতিতে পণ্য বিক্রয়ের বিধান থাকলেও নারায়নহাট ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবি পন্য বিক্রি ও বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসারকে উপস্থিত দেখা যায়নি। দীর্ঘদিনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কর্মী, আত্মীয়-স্বজনদের পরিবারের মধ্যে একাধিক টিসিবির কার্ড ও অনেকের মাঝে কার্ড ছাড়াই একাধিক টিসিবি পণ্য দেয়া হয়েছে।সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়নহাট ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে টিসিবির পন্য রাখা হয়েছে। কক্ষের বাহিরে মেঝেতে চালের বস্তা খোলে একটি প্লাস্টিকের বালতি করে পরিমাপ করে তা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি গ্রাহেক জন্য ৪৭০ টাকার বিপরীতে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার তেল দেয়া হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ কেজি চালে ৪ কেজি ৮৫০-৯০০ গ্রাম চাল। আগেই প্যাকেট করে রাখা ডালেরর ক্ষেত্রেও ১ কেজি ৭০০-৮৫০ গ্রাম ডাল দিতে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় এসব পন্য বিতরণের সময় ট্যাগ অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, ইউপি সদস্য ও কোন দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। পরিষদের ৪ জন গ্রাম পুলিশকে অপর একটি কক্ষে বসে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। চাল বিতরণের কক্ষ ও গ্রাম পুলিশের কক্ষটি ছাড়া সব কক্ষেই তালা ঝুলতে দেখা যায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় পুনরায় গিয়ে ইউপি সচিব মৃদুল কান্তি দে কতগুলো এনআইডি কার্ডে স্বাক্ষর করে টিসিবির পন্য পেতে সুযোগ করে দেয়। এসময় পরিষদের কয়েকজন ইউপি সদস্যের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য বলেন, পরিষদের সচিব প্রতিদিন দুপুরের পরে একটু রেষ্টে যান। সে কারণে দুপুরের পর তাকে দেখা যায়নি। গত ৫ আগষ্ট থেকে অনিয়ম অবিচারের কারণে চেয়ারম্যানকে এলাকার জনগণ পরিষদে আসতে দিচ্ছে না। সেই সুযোগে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার বাহুবল দেখিয়ে যেমন খুশী তেমন করছেন। তাকে কিছুই বলা যায় না। নারায়ণহাট ইউনিয়নের টিসিবি পণ্যের নির্ধারিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শাহ আলম এন্ড সন্সের ম্যানেজার মো. জুয়েল পরিমাপে কমের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষ ব্যবহারের অনুমতি ইউপি সচিব দিয়েছেন। ট্যাগ অফিসার কেন উপস্থিত ছিল না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,পণ্য বিতরণের বিষয়ে ট্যাগ অফিসারকে জানানোর পরও তিনি উপস্থিত হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে সচিব মৃদুল কান্তি দের কাছে যেতে চাইলে তখন তিনি ইউপি সদস্যদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করছেন বলে দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ জানায়। পরে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তুলেননি। টিসিবির পন্য বিতরণের বিষয়ে ট্যাগ অফিসার হুসাইন মোঃ এমরান মুঠোফোনে বলেন, অন্য কাজ থাকায় টিসিবির পন্য বিতরণে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে, সবকিছু তিনি তদারকি করছেন বলে বলে জানান।এ বিষয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন,টিসিবির পণ্য বিক্রয়ে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।