কানাডায় থেকেও ছাত্র আন্দোলনের ৩ মামলার আসামী জয়নুল: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে মামলার আসামি হয়ে ১ মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর দেশ থেকে কানাডায় পালিয়ে গিয়েও রক্ষা নেই এবি পার্টির নেতা জয়নুল আবেদিন রিয়াজ এর। কানাডায় বসবাসকারী জয়নুলকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাশকতায় জড়িত দেখিয়ে নাশকতা ও ভাংচুরসহ অপর ৩টি মামলার আসামি হিসেবে যুক্ত করেছে পুলিশ।
সাতকানিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোস্তাক আহমদ সাব্বির বাদী হয়ে জয়নুলসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে ২টি এবং এসআই আবু বক্কর বাদী হয়ে ১টি মামলা দায়ের করেন। পুলিশের দায়ের করা এসব মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে নাশকতা, হামলা, ভাংচুর চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্যই পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে, আসামীরা যেখানেই থাকুকনা কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কানাডায় থেকেও এবি পার্টি নেতা জয়নুল আবেদিন রিয়াজ কিভাবে ছাত্র আন্দোলনে নাশকতা চালালেন এবং ৩ মামলার আসামী হলেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে সে সরাসরি নাশকতায় জড়িত ছিলো। তাঁর কানাডায় বসবাসের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা তাঁকে খুজছি। পাওয়া মাত্রই আমরা তাঁকে গ্রেফতার করব। আমাদের একটি টিম আছে যারা অপরাধীদেরকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে প্রয়োজনে আমরা তাদের সহযোগীতা নিব।
এদিকে গতকাল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টির) কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসানকে গ্রেপ্তার এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির বিষয়ে নিন্দা জানিয়েছেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র আন্দোলনে সরকারি পেটুয়া বাহিনী কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যাকারীদের বাঁচাতে চিরুনি অভিযানের নামে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণ গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে হয়রানি করা হচ্ছে, এরই অংশ হিসেবে এবিএম খালিদ হাসানকে কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
নেতৃদ্বয় অবিলম্বে এবিএম খালিদ হাসানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবী জানান।
উল্লেখ্য, মামলা ও হয়রানির ভয়ে আনুমানিক এক বছর আগে কানাডায় পালিয়ে যান চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ১৬নং সাতকানিয়া সদর ইউপির করইয়া নগর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মৌলভী পাড়া এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে ও আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়নুল আবেদীন রিয়াজ।
সাতকানিয়া থানার তথ্যমতে তার বিরূদ্ধে পূর্বেরও ৩টি মামলা রয়েছে। যার একটি নগরীর কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত গত ৩০ মার্চ ২০২১ ইং তারিখের ৩২৩/২০২১ এছাড়াও অপর মামলা দুটি হল চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের হওয়া গত ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখের ২২৮/২০২২ ও ২৭ অক্টোবর ২০২২ ইং তারিখের ৫২২/২০২২ ইং। এসব মামলা ছাড়াও কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নাশকতায় জড়িত দেখিয়ে নাশকতা ও ভাংচুরসহ অপর ৩টি মামলার আসামি হিসেবে তাঁর নাম যুক্ত করেছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টার সময় এবি পার্টির দলীয় কার্যালয়ে দূর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে, পরবর্তীতে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং কাউন্সিলর নির্বাচন চলাকালিন দূর্বৃত্তের গুলি থেকে অল্পের জন্য বেচে গেলেও তার সহকর্মীর মৃত্যু হয়। তখন থেকেই জয়নুলকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
জয়নুলের ঘনিষ্ট বন্ধু ইসমাইল প্রতিবেদককে বলেন গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির পর ২০২২ সালে জয়নুল আমার বাসায় তার স্ত্রী সহ দীর্ঘ ৭ মাস আত্মগোপনে ছিলেন।
এদিকে জয়নুলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালে দায়ের হওয়া মামলাটি একটি রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে। যেখানে ৫৮ জনকে এজহারনামীয় আসামি ও ৫০/৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। তার মধ্যে জয়নুলকে ৩৬ নং এজহারনামীয় আসামি করা হয়। এ মামলায় জয়নুলের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য আসামিদের মত ভাঙচুর ও মারামারির অভিযোগ আনা হয়। যদিও জয়নুলের পরিবারের দাবি, তাকে কেবল রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অপরদিকে ২০২২ ইং সালে আদালতে দায়ের হওয়া ২টি মামলায় জয়নুল ছাড়া তার স্ত্রীকেও আসামী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় অবৈধভাবে জমি দখল ও মারামারি করার। যদিও বাদী ও বিবাদীর স্থান পর্যালোচনা করে দেখা যায় মামলার দুইজন বাদী ও জয়নুলের বাড়ির দূরত্ব অন্তত ১৫-২০ কিলোমিটার। এছাড়াও দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ইউনিয়ন এবং তাদের সাথে জয়নুলদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে মামলা দুটির বাদী বেলাল হোসাইন ও জানে আলমের সাথে যোগাযোগ করলে জয়নুলের মামলার কথা শুনে তারা মুঠোফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জয়নুলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, জয়নুলের বিরুদ্ধে হওয়া ৩টি মামলার দুটিতে আমাকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ আমি একজন মহিলা মানুষ। আমার স্বামী রাজনীতি করার দায়ে আমিও আজ ভুক্তভোগী। এই দুটো মামলার কারনে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমাকে আদালতে যেতে হয়। এটি আমার জন্য অত্যান্ত খারাপ বিষয়। আমি যেমন সামাজিকভাবে হেনস্তা হচ্ছি তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম ভুট্টু জানান, মূলত জয়নুল যখন এবি পার্টির রাজনীতিকে এলাকায় প্রকাশ্যে আনেন এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালান তখন সরকার দলীয় এমপি প্রফেসর ড আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী এমপি তাকে টার্গেটে নিয়ে নেন। তাকে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করেন। এরপর নতুন ভাবে নির্বাচিত এমপি এম এ মোতালেব সিআইপি এমপি নির্বাচিত হয়ে সেই ধারা অব্যাহত রাখেন। জয়নুলের মামলাগুলো হচ্ছে মূলত রাজনৈতিকভাবে হয়রানির অংশবিশেষ।
এ বিষয়ে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সদস্য সচিব ছিদ্দিক আহমদ জানান, বর্তমান সরকারের প্রধান হাতিয়ার হলো গায়েবি মামলা। নামে বেনামে বা পুলিশের মাধ্যমে মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের হয়রানি করায় এ সরকারের প্রধান কাজ। জয়নুলের ক্ষেত্রেও সরকার একই কাজটাই করেছে। যার কারণে জয়নুলকে আজ বিদেশে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এছাড়াও বিদেশে অবস্থান করার পরও বাংলাদেশে নাশকতার মামলায় আসামী করার পাশাপাশি গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।