আল কোরআনের পাতায় অনু পরমাণুর গল্প

আল কোরআনের পাতায় অনু পরমাণুর গল্প

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ

print news

আল কোরআনের পাতায় অনু পরমাণুর গল্প: আল কোরআনের পাতায় অনু পরমাণুর গল্প তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো আমাদের চারপাশের জিনিসগুলো কী দিয়ে তৈরি? তোমার শরীরই বা কী দিয়ে তৈরি? হ্যাঁ,তোমাদের মতো প্রাচীন দার্শনিকেরাও এ নিয়ে বহু চিন্তা ভাবনা করেছেন। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকেরা ভাবতেন মাটি,পানি,বায়ু এবং আগুন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থ আর অন্য সকল বস্তু এদের মিশ্রণ তৈরি। গ্রিসের দার্শনিক ডেমোক্রিটাস প্রথম বলেছিলেন প্রত্যেক পদার্থের একক আছে যা অতি ক্ষুদ্র আর অবিভাজ্য। তিনি এর নাম দেন এটম (atom)।

আল কোরআনের পাতায় অনু পরমাণুর গল্প

কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দিয়ে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি বলে এটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। অবশেষে ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরমাণু সম্পর্কে একটি মতবাদ দেন যে,প্রতিটি পদার্থ অজস্র ক্ষুদ্র এবং অবিভাজ্য কণার সমন্বয়ে গঠিত। তিনি দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের সম্মানে এ কণার নাম দেন এটম(Atom), যার অর্থ পরমাণু। এর পরে প্রমাণিত হয় যে পরমাণু অবিভাজ্য নয়। তাদের ভাঙলে পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্র কণিকা ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি পাওয়া যায়। ( রসায়ন,অধ্যায় নম্বর তৃতীয়,পৃষ্ঠা নম্বর ৩৫-৩৬, নবম দশম শ্রেণী)।

আরো পড়ুনঃ হজ মুসলিম ঐক্যের প্রতীক

পারমাণবিক মডেল গঠনের পিছনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানীরা হলেন জন ডাল্টন, জে জে থমসন,আর্নেস্ট রাদারফোর্ড এবং নীলস বোর।পরীক্ষামূলক প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ১৮০৩ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন বলেছেন যে,’মৌলের ক্ষুদ্রতম কণা হলো পরমাণু যাকে পুনরায় বিভাজিত করা যায় না।’ আমরা এখন জানি পরমাণু পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কণা নয় এবং পরমাণু অবিভাজ্য নয়। পরমাণুকেও ভাগ করা যায়,পরমাণু আসলে ইলেকট্রন,প্রোটন এবং নিউট্রন নামক ছোট ছোট কণা নিয়ে গঠিত। [বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ,অষ্টম শ্রেণী (৩৭-৩৮)]

পরমাণু হলো মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা যার মধ্যে মৌলের গুণাগুণ থাকে।যেমন – নাইট্রোজেনের পরমাণুতে নাইট্রোজেনের ধর্ম বিদ্যমান আর অক্সিজেনের পরমাণুতে অক্সিজেনের ধর্ম বিদ্যমান।
দুই বা দুইয়ের অধিক সংখ্যক পরমাণু পরস্পরের সাথে রাসায়নিক বন্ধন – এর মাধ্যমে যুক্ত থাকলে তাকে অনু বলে। দুটি অক্সিজেন পরমাণু(O) পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিজেন অনু(O2) গঠিত হয়। আবার,একটি কার্বন একটি কার্বন পরমাণু(C) দুটি অক্সিজেন পরমাণুর(O) সাথে যুক্ত হয়ে একটি কার্বন ডাই অক্সাইড অনু(CO2) গঠিত হয়।[রসায়ন,নবম দশম,অধ্যায়-৩, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮]

অর্থাৎ,মৌলিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে মৌলটির সমস্ত ধর্ম উপস্থিত থাকে এবং যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে তাকে মৌলিক পদার্থটির পরমাণু বলে। সমস্ত কঠিন, তরল, গ্যাস এবং আয়ন -এর গঠনের মূলে রয়েছে নিস্তরিত বা আধানগ্রস্ত পরমাণু।

পরমাণুর গঠন:-

মহাবিশ্বের সবকিছুই পরমাণু দিয়ে গঠিত। প্রতিটি পরমাণুর ভেতরে থাকে একটি নিউক্লিয়াস। এটিই পরমাণুর কেন্দ্র। এখানে অতিক্ষুদ্র প্রোটন ও নিউট্রন গুচ্ছকারে থাকে। এদের ভর ও চার্জের পরিমাণও অতি অল্প।

পরমাণুর দুইটি অংশ:-

  1. কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস;
  2. নিউক্লিয়াসের বাইরে নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন।

ইলেকট্রন হচ্ছে ঋণাত্মক বা নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট এবং নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন ধনাত্মক বা পজিটিভ চার্জ বিশিষ্ট এবং নিউট্রন চার্জহীন।

শক্তির ধ্বংস নেই এই বিষয়ে কোরআন কি বলে:-

বিজ্ঞান জানাচ্ছে সমস্ত বিশ্বজগত অসংখ্য পরমাণু দ্বারা গঠিত। এ থিউরি অনুযায়ী কোনো বস্তু বা জিনিসের নিঃশেষে ধ্বংস নেই। কোনো প্রাণীর দেহকে যা-ই করা হোক না কেন, তা নিঃশেষে ধ্বংস হয় না।মাটির সাথে মিশে থাকে। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর নির্দেশে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পরমাণুগুলো পুনরায় একত্রিত হয়ে পূর্বের ধারণ করবে। মানুষের দেহ পচে গলে যে অবস্থায়ই ধারণ করুক না কেন, তা সেদিন পূর্বের আকৃতি ধারণ করে নিজের কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। অবিশ্বাসীদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রশ্নের ভাষায় বলেন-

اَفَعَیِیْنَا بِالْخَلْقِ الْاَوَّلِ١ؕ بَلْ هُمْ فِیْ لَبْسٍ مِّنْ خَلْقٍ جَدِیْدٍ۠

আমি কি মানুষদের প্রথমবার সৃষ্টি করতে গিয়ে(এতোই)ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে,(এরা) আমার নতুন সৃষ্টি করার কাজে সন্দেহ পোষণ করছে!(সূরা ক্বাফ-১৫)

আরো পড়ুনঃ সূফী নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী (রহ.)’র জীবন ও অবদান

সে যুগেও ছিলো বর্তমান যুগেও এক শ্রেণীর অজ্ঞ,মূর্খ,জ্ঞান পাপী আছে যাদের ধারণা এই মানুষের দেহ সাপ, বাঘ,মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর পেটে যাচ্ছে। মাটির গর্তে পচে গলে মাটির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।এই শরীর কি পুনরায় বানানো সম্ভব? অতএব হাশর,বিচার কেয়ামত এসব বানোয়াট ব্যাপার। এদের উদ্দ্যেশ্যে করে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

মানুষ কি ধরে নিয়েছি,(সে মরে গেলে) আমি তার অস্থিমজ্জাগুলো আর কখনো একত্রিত করতে পারবো না; অবশ্যই(আমি তা পারবো),আমি তো বরং তার আঙ্গুলের গিরাগুলোকেও পুনর্বিন্যস্ত করে দিতে পারবো ।(সূরা আল কেয়ামাহ-৩-৪)

এ পৃথিবীতে মানুষ যে দেহ নিয়ে বিচরণ করছে,যে দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে আল্লাহর বিধান পালন করেছে অথবা অমান্য করেছে,সেই দেহ নিয়েই সেদিন উত্থিত হবে।

مَا بَدَاْنَاۤ اَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِیْدُهٗ١ؕ وَعْدًا عَلَیْنَا١ؕ اِنَّا كُنَّا فٰعِلِیْنَ

যেভাবে আমি একদিন এ সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম,সেভাবেই আমি আবার পুনরাবৃত্তি ঘটাবো,এটা(এমন এক)ওয়াদা,(যা)পালন করা আমার উপর জরুরী; আর এই কাজটা আমি করবোই।( সূরা আম্বিয়া ১০৪)।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, শক্তির পুরোপুরি ধ্বংস কখনোই হয়না শুধুমাত্র এক রূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তন হয়।

অনু পরিমাণ কর্মের হিসেবও আল্লাহ নিবেন:-

فَمَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَیْرًا یَّرَهٗؕ

তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালোকাজ করবে সে তা দেখে নেবে।

وَ مَنْ یَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا یَّرَهٗ۠

এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে।(সূরা আয যিলজাল ৭-৮)

একবার হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আহার করেছিলেন এমন সময় এই আয়াতটি নাযিল হয়। হযরত আবু বকর (রা.) খাবার থেকে হাত গুঁটিয়ে নেন। তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রসূল! যে অণু পরিমাণ খারাপ কাজ আমি করেছি তার ফলও কি আমি দেখে নেবো? ” জবাব দেনঃ “হে আবু বকর! দুনিয়ায় যেসব বিষয়েরই তুমি সম্মুখীন হও তার মধ্যে যেগুলো তোমার অপছন্দনীয় ও অপ্রীতিকর ঠেকে সেগুলোই তুমি যেসব অণু পরিমাণ অসৎকাজ করেছো তার বদলা এবং সেসব অণু পরিমাণ নেকীর কাজই তুমি করো সেগুলো আল্লাহ‌ আখেরাতে তোমার জন্য সংরক্ষণ করে রাখছেন।

(ইবনে জারীর, ইবনে আবী হতেম, তাবারনী ফিল আওসাত, বাইহাকী ফিশ শু’আব, ইবনুল মুনযির, হাকেম, ইবনে মারদুইয়া ও আবদ ইবনে হুমাইদ) এই আয়াতটি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ ﷺ হযরত আবু আইউব আনসারীকেও বলেছিলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই নেকী করবে তার পুরষ্কার সে পাবে আখেরাতে। আর যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ করবে বিপদ-আপদ ও রোগের আকারে এই দুনিয়ায় তার শাস্তি পেয়ে যাবে। (ইবনে মারদুইয়া)।

কাতাদাহ হযরত আনাসের (রা.) বরাত দিয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত বাণীটি উদ্ধৃত করেছেনঃ “আল্লাহ মু’মিনের প্রতি জুলুম করেন না। দুনিয়ায় তার নেকীর প্রতিদানে তাকে রিযিক দান করেন এবং আখেরাতে আবার এর পুরস্কার দেবেন। আর কাফেরের ব্যাপারে দুনিয়ায় তার সৎকাজের প্রতিদান দিয়ে দেন, তারপর যখন কিয়ামত হবে তখন তার খাতায় কোন নেকী লেখা থাকবে না।” (ইবনে জারীর) মাসরূক হযরত আয়েশা (রা.) থেকে রেওয়ায়াত করেছেনঃ তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, “আবদুল্লাহ ইবনে জুদ’আন জাহেলীযুগে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করতো, মিসকিনকে আহার করাতো, মেহমানদের আপ্যায়ন করাতো, বন্দিদের মুক্তি দান করতো। আখেরাতে এগুলো কি তার জন্য উপকারী হবে? ”রসূলুল্লাহ ﷺ জবাব দেন “না, সে মরার সময় পর্যন্ত একবারও বলেনি,

رَبِّ اغْفِرْلِى خَطِيْئَتِىْ يَوْمَ الدِّيْنِ

(হে আমার রব! শেষ বিচারের দিন আমার ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দিয়ো।)”(ইবনে জারীর) অন্যান্য আরো কিছু লোকের ব্যাপারেও রসূলুল্লাহ ﷺ এই একই জবাব দেন। তারা জাহেলী যুগে সৎকাজ করতো কিন্তু কাফের ও মুশরিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কোন বাণী থেকে জানা যায়, কাফেরের সৎকাজ তাকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করতে পারবে না ঠিকই তবে জালেম ফাসেক ব্যভিচারী কাফেরকে জাহান্নামে যে ধরনের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে তার শাস্তি তেমনি পর্যায়ের হবে না। যেমন হাদীসে বলা হয়েছেঃ হাতেম তাঈ এর দানশীলতার কারণে তাকে হালকা আযাব দেয়া হবে। (রূহুল মা’আনী)

তবুও এ আয়াতটি মানুষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের ব্যাপারে সজাগ করে দেয়। সেটি হচ্ছে, প্রত্যেকটি সামান্যতম ও নগণ্যতম সৎকাজেরও একটি ওজন ও মূল্য রয়েছে এবং অনুরূপ অবস্থা অসৎকাজেরও। অর্থাৎ অসৎকাজ যত ছোটই হোক না কেন অবশ্যি তার হিসেব হবে এবং তা কোন ক্রমেই উপেক্ষা করার মতো নয়। তাই কোন ছোট সৎকাজকে ছোট মনে না করা উচিত। কারণ এই ধরনের অনেকগুলো ছোট গোনাহ একত্র হয়ে একটি বিরাট গোনাহের স্তুপ জমে উঠতে পারে। একথাটিই রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর হাদীসে ব্যক্ত করেছেন। বুখারী ও মুসলিমে হযরত আদী ইবনে হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো-তা এক টুকরা খেজুর দান করার বা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন।”

হযরত আদী ইবনে হাতেম থেকে সহীহ রেওয়ায়াতের মাধ্যমে আরো বর্ণিত হয়েছে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “কোন সৎকাজকেও সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, যদিও তা কোন পানি পানেচ্ছু ব্যক্তির পাত্রে এক মগ পানি ঢেলে দেয়াই হয় অথবা তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করাই হয়।” বুখারী শরীফে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে একটি রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে। তাতে রসূলুল্লাহ ﷺ মেয়েদেরকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ “হে মুসলিম মেয়েরা! কোন প্রতিবেশী তার প্রতিবেশীনীর বাড়িতে কোন জিনিস পাঠানোকে সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, তা ছাগলের পায়ের একটি খুর হলেও।”

মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ-এ হযরত আয়েশার (রা.) একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “হে আয়েশা! যেসব গোনাহকে ছোট মনে করা হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকো। কারণ আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” মুসনাদে আহমাদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ “সাবধান, ছোট গোনাহসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কারণ সেগুলো সব মানুষের ওপর একত্র হয়ে তাকে ধ্বংস করে দেবে।”

সেদিন কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে:-

বিচার দিবসের অপরিহার্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। এমন একটি সময় অবশ্যই আসা উচিত জালেমদেরকে তাদের জুলুমের এবং সৎকর্মশীলদের তাদের সৎ কাজের প্রতিদান দেয়া হবে। যে সৎকাজ করবে সে পুরস্কার এবং যে অসৎকাজ করবে সে শাস্তি লাভ করবে। সাধারণ বিবেক বুদ্ধি এটা চায় এবং এটা ইনসাফের দাবী। আখিরাতের বিচার দিবসের দিন পরমাণু সমপরিমাণ বা তার থেকেও ক্ষুদ্র কোনো কিছুই মহান আল্লাহর অগোচরে থাকবে না,তিনি সকল কিছুই সেদিন প্রকাশ করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

١ۚ لَا یَعْزُبُ عَنْهُ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الْاَرْضِ وَ لَاۤ اَصْغَرُ مِنْ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكْبَرُ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍۗۙ

لِّیَجْزِیَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ١ؕ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَّ رِزْقٌ كَرِیْمٌ

وَ الَّذِیْنَ سَعَوْ فِیْۤ اٰیٰتِنَا مُعٰجِزِیْنَ اُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مِّنْ رِّجْزٍ اَلِیْمٌ

এ আকাশমন্ডলী ও যমীনের অনু পরমাণু- তার চাইতেও ক্ষুদ্র কিংবা বড়ো – এর কোনকিছুই তার জ্ঞানসীমার অগোচরে নয়,এমন কিছু নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ নেই! যেন(এর ভিত্তিতে) তিনি তাদের পুরস্কার দিতে পারেন যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে; (বস্তুত) তারাই হচ্ছে সে(সৌভাগ্যবান)মানুষ,যাদের জন্য আল্লাহর তায়ালার(প্রশস্থ)ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রয়েছে। যারা(এ জমিনে) প্রাধান্য পাবার জন্য আমার আয়াতকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চেষ্টা করে,তাদের জন্য(পরকাল) ভয়ংকর মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।(সূরা সাবা ৩-৫)

সেদিন মানুষের কথামালা প্রকাশ করা হবে:-

মানুষ যত কথা বলছে তা সবই রেকর্ড করা হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মুখ গহ্বর থেকে উচ্চারিত সকল শব্দই রেকর্ড করার জন্যে সদা সতর্ক ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন। তিনি সকল কথা রেকর্ড করেই যাচ্ছেন। মানুষের কাজকর্ম ও কথা রেকর্ড করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা কোন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, তা কোনো মানুষেরই জানা নেই। তবে আধুনিক বিজ্ঞান যে কথাগুলো বলছে, তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। কোরআন বলছে,মানুষের দেহের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ,পৃথিবীর মাটি সেদিন সাক্ষ্য দেবে। অর্থাৎ এই মাটির ওপর যাকিছু সংঘটিত হচ্ছে,আল্লাহ তায়ালা মাটিকে তা রেকর্ড করার ক্ষমতা দান করেছেন। আবার মানবদেহকেও সকল ক্রিয়াকর্ম রেকর্ড করার শক্তি তিনিই দান করেছেন।

আধুনিক বিজ্ঞান বলছে,মানুষ যাকিছুই করে তা তার চার পাশের পরিবেশ বা বস্তুর ওপর প্রতিফলিত হয়,সকল ধরনের শব্দ বাতাস এবং সকল বস্তুর সাথে মিশে থাকে। কোনো ধ্বংসই হয়না। পবিত্র কোরআনও বলছে,সেদিন এসব কিছুই সাক্ষ্য প্রদান করবে।

মহান আল্লাহ বলছেন –

مَا یَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ اِلَّا لَدَیْهِ رَقِیْبٌ عَتِیْدٌ

(ক্ষুদ্র) একটি শব্দও সে উচ্চারণ করে না,যা সারাক্ষণ করার জন্যে একজন সদা প্রহরী তার পাশে নিয়োজিত থাকে না।(সূরা কাফ-১৮)

এবার দেখুন,আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং মানুষের সকল কিছু কিভাবে রেকর্ড করছেন। তিনি তার অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে যা কিছু পবিত্র কুরআনে বলেছেন এবং সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

পবিত্র কোরআন বলছে –

وَ مَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ

আকাশসমুহ ও পৃথিবীর অনু পরিমাণও তোমার প্রতিপালকের অগোচর নয়।(সূরা ইউনুস -৬১)

সারকথা হলো, পরমাণুকে যেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করা যায়(ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন) তেমনি সকল কাজকর্মকেও অতিক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যায়।অতিক্ষুদ্র পাপ কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা ভয়ানক শাস্তি দিবেন তদ্রুপ অতিক্ষুদ্র নেককাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা পুরস্কৃত করবেন।

✍️তাইয়্যিবাহ তাসনীম
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
(অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগ)

নিউজটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুনঃ